বঙ্কিমচন্দ্র | অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রণীত
[দ্বিতীয় পর্ব]
কাঠের সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে
দেওয়ালের কোনও লুকনো খাঁজে, তিমি
মাছের পেটে
এখনও তুমি খোদাই হচ্ছ ঘুমের ভেতর। যথার্থ এক কাঠের বালক।
কিন্তু শ্বাস চলছে—যেন ঝড়ের হাতে তুমি ধরা প’ড়ে গেছ
আর প্রতিনিঃশ্বাসে প্রতিহত করছ যে তোমার পিছু নিয়েছে।
পলায়নশীল কোনও আলো নেই। স্মৃতি দিয়ে পূর্ণ হয় বস্তু এবং জড়।
শ্রেণি, প্রকার ও বর্গে আমরা বাছাই করছি নিজেদের।
অনেক উপাদানের মধ্যে এক উপাদান হিসেবে রাখছি না।
হাওয়া এবং আগুন থেকে উৎপন্ন জীব, মানুষও।
আর হলুদ চোখের জন্তুরা মেপে নিচ্ছে
কী থেকে কী হ’ল। কী রইল।
তোমার সাথে উলঙ্গ হয়ে দেখা করেছি
মাঝরাতে—সময়ের একেবারে শেষ প্রান্তে।
যেখানে একটা শরীর হস্তান্তরিত হয় আরেকটা শরীরের জন্য
—ভোর চারটের কবিতা, শারন হাস্
ক্যান্সার
সেন্টারের পাশ দিয়ে যে রাস্তাটা নিউ কোচবিহার গেছে, তার ডানদিকে, শালবাগানের ভেতর,
উন্মত্ত অবস্থায় অরুণেশকে উদ্ধার করেন বঙ্কিম। অরুণেশের বন্ধুরা ওঁকে চূড়ান্ত
মদ্যপ, অর্ধচেতন ও প্রায় উন্মত্ত অবস্থায় এখানে ফেলে গেছে। সেখানে একটা পাথরে মাথা
রেখে শুয়ে অরুণেশ বিশুদ্ধ ফরাসি উচ্চারণে একের পর এক র্যাঁবোর কবিতা ব’লে
যাচ্ছেন।
Surtout,
vaincu, stupide, il était entêté
A se renfermer dans la fraîcheur des latrines:
Il pensait là, tranquille et livrant ses narines.
…
Comme
d'un cercueil vert en fer-blanc, une tête
De femme à cheveux bruns fortement pommadés
D'une vieille baignoire émerge,
lente et bête,
Avec des déficits assez mal ravaudés ;
Puis le col gras et gris, les larges omoplates
Qui saillent ; le dos court qui rentre et qui ressort ;
Puis les rondeurs des reins semblent
prendre l'essor ;
La graisse sous la peau paraît en
feuilles plates ;
L'échine est un peu rouge, et
le tout sent un goût
Horrible étrangement ; on remarque surtout
Des singularités qu'il faut voir à la
loupe...
Les reins portent deux mots gravés : Clara
Venus ;
Et
tout ce corps remue et tend sa large croupe
Belle hideusement d'un ulcère à l'anus.
শ্রোতা, এই অগণিত
শালগাছ। তার প’ড়ে থাকা অজস্র শুকনো পাতা।
পরনের ধুতি প্রায়
খুলে গেছে। কবি এখানে উন্মাদ ও প্রায় উলঙ্গ।
শালবাগানের মাঝখান
দিয়ে চলে গেছে তোর্ষার একটা চিলতে শাখা। এলাকার মানুষ এ-কে মরা তোর্ষা বলে। মরা,
কিন্তু প্রবহমান। মূলস্রোত থেকে নিজের পথ নিয়ে সরে এসেছিল এই শাখা, নিজের মতো ক’রে
চলবে ব’লে। আশপাশের গ্রাম-বস্তির মেয়েরা সেখানে কাপড় কাচছে। স্নান করছে ছেলেরা।
মানুষের ক’রে যাওয়া ফুর্তি ও পিকনিকের ক্ষত নিয়ে তোর্ষার দু’পাশে দাঁড়িয়ে আছে
শালবাগান। কোথাও কাগজের এঁটো প্লেট। দুমড়োনো প্লাস্টিকের কাপ। প’ড়ে আছে ব্যবহৃত কন্ডোম।
সিগারেটের খালি প্যাকেট।
বঙ্কিম রিকশাটাকে
ছেড়ে দিয়েছেন বাইরে, বাঁধে ওঠার মুখটায়। বঙ্কিমকে প্রথমে চিনতে পারেননি অরুণেশ।
বঙ্কিমও নিজের পরিচয় দেননি। দু’জনে মুখোমুখি ব’সে থাকেন। ধ্যানস্থ অরুণেশ ব’লে যান র্যাঁবোর কবিতাগুলি।
— Ici,
va-t-on siffler pour l'orage, et les Sodomes, — et
les Solymes, — et les bêtes féroces et les armées,
— (Postillon
et bêtes de songe reprendront-ils sous les plus suffocantes
futaies, pour m'enfoncer jusqu'aux yeux dans la source de soie).
— Et nous envoyer, fouettés à
travers les eaux clapotantes et les boissons répandues,
rouler sur l'aboi des dogues...
....
Je
vous indiquerais les richesses inouïes.
J'observe
l'histoire des trésors que vous trouvâtes.
Je
vois la suite ! Ma sagesse est aussi dédaignée
que
le
chaos. Qu'est mon néant, auprès de la stupeur qui
vous
attend ?
বলতে বলতে বমি ক’রে ফেলেন। ধুতি ফতুয়া ভিজে লাট। অরুণেশের সে-সবে ভ্রূক্ষেপই নেই। বমি হওয়ায় নেশা কিছুটা
কেটে যায়। অরুণেশ আবার মদ্যপান করতে চান। কিন্তু মদ তো আর নেই। তড়িঘড়ি উঠে পড়েন।
ডান হাতের কব্জি
দিয়ে ঠোঁটে লেগে থাকা বমির তরল মুছতে মুছতে বঙ্কিমকে
বলেন,—‘চলেন। আমার লগে। আমি নিয়া যামু আপনেরে ভাটিখানায়।’
অগত্যা বঙ্কিমকেও উঠতে হয়।
অরুণেশ টলমল, দাঁড়িয়ে পড়েন। কি খেয়াল হয়, উলটো দিকে হাঁটা দেন। বঙ্কিমও ওঁর পিছু
নেন। বাঁধে উঠে পড়েন অরুণেশ। পায়ের পাতা, হাঁটু, ধুলোয় মাখামাখি। হাওয়াই চটির চটাস্
চটাস্ শব্দ তুলে মাতাল তরণী বাইতে বাইতে শালজঙ্গলের ভেতর হেঁটে যাচ্ছেন কবি অরুণেশ ঘোষ। তাঁর
পেছন পেছন বঙ্কিমচন্দ্র। জনবসতি এদিকে কিছু নেই। সামনে বাঁধ শেষ। রেললাইন দেখা
যায়।
—‘এইহেনে একডা গঞ্জিকা
সেবনের ঠেক আছে বুঝলেন। বড়ু চণ্ডীদাসের দোকান। মানে, শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের ল্যাখক।
অহন আর বিশেষ ল্যাখেন ট্যাখেন না। খুউউব ভালো মণিপুরী গাঁজার পুরিয়া আনে চণ্ডীদাস।
আমরা ঐহানে বইয়া বইয়া রাইজ্যের প্যাচাল পারি। কি করুম, আমাগো তো আর আপনেদের মতো
কফি হাউস নাই।’
বেড়ার ধারা লাগানো টিনের
চালের একটা চা-গুমটির সামনে এসে দাঁড়ান অরুণেশ। অনেকটা বড়ো জায়গা নিয়ে দোকানটা।
রাফ ঢালাই মেঝে। ভেতরে অনেকগুলো কাঠের বেঞ্চ।
দোকানের সামনে এসেই অরুণেশ
হাঁক দেন, ‘পুরিয়া বানাও হে চণ্ডীদাস। অতিথি অভ্যাগত দ্বারে’।
অরুণেশকে দেখে অশীতিপর
চণ্ডীদাস ফোকলা দাঁতে এক খিলি হেসে সুর ক’রে বলেন, ‘আইস ল
বড়ায়ি মোর রাখহ পরাণ। সহিতে না পারোঁ মদন পাঁচ বাণ’।
চণ্ডীদাসের পদের উত্তরে
অরুণেশ তৎক্ষণাৎ জবাব দেন, ‘কাহ্নের তাম্বুল রাধা দিলোঁ তোর হাথে—সে তাম্বুল
রাধা তোঁ ভাঁগিলি মোর মাথে’। ব’লে বঙ্কিমের দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচান। যেন, কেমন
দিলাম? এবার দেখি বুড়ো কী বলে।
সস্প্যানে হাতা দিয়ে চা
গুলতে গুলতে চণ্ডীদাস মাথা নেড়ে নেড়ে বলেন, ‘এ ধন যৌবন বড়ায়ি সবঈ তো
অসার। ছিণ্ডিআঁ পেলাইবোঁ গজমুকুতার হার’।
অরুণেশ মাথায় হাত দিয়ে ঝুঁকে
পড়েন।
—‘আহাহা রে! কি শুনাইলা বড়ু, কি শুনাইলা। বাঙলায় কবিতা
ল্যাখনডা হালা তুমিই চ্যালেঞ্জিং কইরা দিসো। যৌবন ছিঁড়া গজমুক্তার হার—আবার বলো বড়ু আবার বলো।’
চণ্ডীদাস কিছু বলেন না।
মিটিমিটি হাসতে থাকেন।
একটু পরে বঙ্কিমের দিকে চেয়ে
বলেন, ‘তা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আজ গরীবের দোকানে কি মনে
ক’রে?’
—‘মধুসূদন পাঠিয়েছে। রাজবাড়িতে যাব, একটা কাজে—’
বঙ্কিমকে শেষ করতে দেন না
অরুণেশ। কথা কেড়ে নিয়ে বলেন—
—‘আপনে অহন আমার জিম্মায়।
কুত্থাও যাবেন না। আপনেরে আইজ আমি দেখামু বেশ্যাপল্লীতে কবিসম্মেলন’।
—‘বে-শ্-শ্যা-প-’
—‘আরে দ্যাহেন দ্যাহেন, চক্ষু কর্ণ নাসিকা জিহ্বা মেইলা
দ্যাহেন। জীবন কত শীৎকারময়। জীবনে এইগুলাও দ্যাহন দরকার আছে। খালি ঘরে বইয়া বইয়া
লিখলে চলব?’
বঙ্কিমচন্দ্র এ’ শহরের কিছুই
চেনেন না। মধুসূদনের চিঠি উদ্ধারের জন্য রাজবাড়ির দস্তাবেজখানা অবধি পৌঁছাতে হ’লে
অরুণেশই ভরসা। ফলত, চুপ করেই থাকতে হয়। জীবনের এই বিচিত্র রূপ ও রঙ রোমাঞ্চকরও
বটে।
চণ্ডীদাস একটি পুরিয়া এনে
দেন অরুণেশকে। তিনি সেটিকে ফতুয়ার পকেটস্থ করেই হেসে বলেন, ‘আইজ উঠি
হে বড়ু। বঙ্কিমরে একডু শহরডা ঘুইরা দ্যাহাই। তমার লগে আইরেকদিন পীরিত জমাব’।
চণ্ডীদাসের দোকান থেকে
বেরিয়ে ওঁরা রেললাইনের পাশের রাস্তা বরাবর হাঁটতে থাকেন। মিনিট খানেক হেঁটে যে
জায়গাটায় ওঠেন, তার নাম, রেলঘুমটি। রিকশাস্ট্যাণ্ডের সামনে দাঁড়িয়ে অরুণেশ বাঁ
দিকের রাস্তাটা দেখিয়ে বলেন,—
—‘এইহান দিয়া সুজা গেলে
রাজেন তেপথী। বাবুর হাটের রাস্তা। এই রাস্তা দিয়াই এই শহরে আসছিল মুঘল হস্তিবাহিনী।
আমরা অহন হেই রাস্তার উপরে খাড়ায়া আছি। চলেন, স্টমাকে কিছু ফুয়েল ঢালন দরকার’।
ব’লে রিকাশায় উঠে পড়েন। বঙ্কিমও ওঠেন। বঙ্কিম জানেন না
তিনি কোথায় যাচ্ছেন। কি ঘটবে সেখানে। অচেনা শহর। অজানা পরিবেশ। কিন্তু অনুভব করতে
পারেন মার্কেজ কেন তাঁকে বলেছিলেন অরুণেশের সাথে অবশ্যই একটা গোটা দিন কাটাতে।
রিকশাওলা প্যাডেলে পা ঠেকিয়ে
জিজ্ঞেস করে, ‘বাবু, যাবেন কই?’
—‘বাবু কারে কস? আমি তো কামলা। তয় ইনারে বাবু কইতে পারস। চল
না, বাঁ দিক দিয়া সুজা চল’
রেললাইন পেরিয়ে রিকশা বাঁ
দিকের রাস্তায় ওঠে। দু’পাশে একতলা-দোতলা বাড়ি। গাছগাছালি। বঙ্কিম এসব দেখতে দেখতে
অরুণেশকে বলেন, ‘একটা কথা জিজ্ঞেস করব, কিছু মনে করবেন না তো?’
—‘কন্ না’
—‘আপনি তো শুনেছি খুব ভালো সাঁতার জানেন। জলে ডুবলেন কীভাবে—’
—‘দ্যাহেন, আত্মহনন হইতেআসে একডা ইচ্ছাশক্তির ব্যাপার। উইল পাওয়ার আর সেলফ্-কন্ট্রোল। যে সন্তরণ জানে না, তার নিজের হাতে তো কিসুই নাই। ডুইবা যাওন
তার নিয়তি নির্ধারিত। ভাইসা থাকন তার দ্বারা সম্ভব না। আমি সন্তরণ বিদ্যা জানি।
যহন আমার ডুইবা যাওন দরকার তহন সন্তরণ বিদ্যার কৌশল প্রয়োগ না কইরা ডুইবা যাওনের
ইচ্ছাশক্তি আমার আছে। মাইনষে খালি
ইচ্ছাডারে দ্যাহে। তার পিছনে থাকা শক্তিডারে দ্যাহে না।’
—‘আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি জানতে পারি?’
—‘নিশ্চয় পারেন। তয় অহন না।’
একটু থেমে বলেন, ‘বঙ্কিমচন্দ্র,
আপনে হইলেন বাঙলার ঋষিতুল্য। অপরাধ যদি না নেন তয় একখান সাজেশান দিই আপনেরে’
—‘বলুন’
—‘মনডারে এক্কেবারে ডুবাইয়া দ্যান। ভাসাইয়া দ্যান। অকূল
দরিয়ায় যহন আইসা পড়সেনই তহন কূল দ্যাহনের লগে অত আকুলি বিকুলি কইরেন না।’
রিকশাটা সোজা চলে যাচ্ছিল।
অরুণেশ ছেলেটার পিঠে হাত ছুঁইয়ে বলেন, ‘ডান দিকে চল রে, সুজা নিস না’।
একটা সরু রাস্তায় উঠে পড়ে
রিকশা। দু’পাশে আর্মি ব্যারাক। ছেলেটাকে আর বলে দিতে হয় না কোন্ দিকে যাবে।
এবারে ও যেন বুঝে যায় এদের কোথায় নিয়ে যেতে হবে। একটা বস্তির রাস্তায় এসে রিকশা
থামে।
অরুণেশ বঙ্কিমকে বলেন,
‘ভাড়াটা মিটায়া দ্যান’।
রাস্তার দু’পাশে বস্তি।
চপ-তেলেভাজা-বড়া-পকোড়া ভাজছে কোনও দোকানে। ছোট ছোট বাচ্চা ময়লা জামা প’রে ধুলো মেখে খেলছে রাস্তার ওপর। যুবতী ও বয়স্কা মেয়ে-মহিলারা বাড়ির
সামনে দাঁড়িয়ে। রিকশা থেকে নেমে দু’জনে হাঁটতে থাকেন।
—‘এই জায়গাডার নাম হইল খালাসিপট্টি। আপনাগো য্যামন
খালাসিটোলা, আমাগো তেমনি খালাসিপট্টি। আপনাগো কেটি। আমাগো কেপি। দারুর জন্য আমি
ভাটিখানায় যাই না। বিলাতি মালের দোকানেও যাই না। এইহেনে আসি। দুইডা কারণ আছে
তার। এক তো এইহেনে চয়েস অব ড্রিঙ্ক আছে। এইহেনে য্যামন রাম হুইস্কি বিয়ার ভদকা
মেলে, রক্সিও পাওন যায়। বাঙলা মালও থাকে। মদ্যপানের ব্যাপারে আমি খাঁটি স্বদেশী।
পারলে চরকা কাইট্যা মদ বানাইতাম। আর দুই হইল, এইহেনে আছে জনবসতি। মানুষ আছে।
বড়ো বড়ো ভারী বুকের সুদৃশ্য নেপালি যুবতী। আর প্রাণোচ্ছল শিশু। আহা।’
বঙ্কিম যে মদ্যপান করেন না
তা নয়। কিন্তু সেটা সমবয়েসী বন্ধুসর্গে। এবং অবশ্যই পরিচিত পরিবেশে। এ’ শহরে তিনি
কাজে এসেছেন। এখানে মদ্যপ হওয়া তাঁর সাজে না। অরুণেশ বঙ্কিমকে বাইরে দাঁড় করিয়ে
একটা ঘরে ঢুকে যান। কথা দিয়েছেন দশ মিনিটে ফিরবেন। পকোড়ার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে
থাকা মেয়েগুলো বঙ্কিমকে দ্যাখে। মিটিমিটি হেসে নিজেরা কি বলাবলি করে। শোনা যায় না।
অপ্রস্তুত বোধ করেন বঙ্কিম। এক একটা বাড়ির বারান্দায়, সিঁড়িতে ব’সে ঢুলছে লোকজন। চারদিকে
স্পিরিটের ঝাঁজালো গন্ধ। নাইটি-ম্যাক্সি প’রে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েগুলো কেউ শায়া
পরেনি। পাতলা ছাপা ম্যাক্সিতে আলো প’ড়ে আবছা হলেও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ওদের
দু’পায়ের লম্ব অবয়ব, কাঠামো। অত্যন্ত পৃথুলা পাছা নিয়ে একটি মেয়ে নীচু হয়ে
রোয়াকে ঝাঁট দিচ্ছে। ওর মুখটা দেখতে ইচ্ছে হয় না বঙ্কিমের। চারদিকের এই গন্ধ আর
কোলাহল খুঁটিয়ে দ্যাখেন তিনি। এখান থেকেই তো শুঁকে শুঁকে তাঁর কবিতাগুলো নির্মাণ
করেন অরুণেশ ঘোষ। সন্ধে হয়ে আসে প্রায়। দশ মিনিট হয়ে গেছে অনেক আগেই। বঙ্কিমের
কোনও খেদ থাকে না এই দেরির জন্য। মদ ও মেয়েমানুষ নিয়ে এই যে গলিটা বেঁচে আছে,
অলঙ্কার খুলে খুলে তার রূপ অনুমান করেন বঙ্কিম।
পূর্ণ টলমল অরুণেশ বেরিয়ে
আসেন, বেঁটেখাটো একটি ছেলের কাঁধে ভর দিয়ে। বঙ্কিমকে কিছুমাত্র বলার সুযোগ না দিয়ে
বললেন, ‘চলেন’।
বঙ্কিম ওদের দু’জনের পিছু
পিছু হাঁটা দেন। ক্রমশ পেছনে সরে যায় খালাসিপট্টি। ছেলেটির পিঠের বাঁ দিকে একটা
গোলাকার গর্ত। পিঠ থেকে হৃৎপিণ্ড ভেদ ক’রে সে গর্ত এপার ওপার হয়ে গেছে। পাঁচিলের
ফুটোয় চোখ রেখে দেখার মতো এই ফুটোও ওপার দেখায়। কিছুটা হেঁটে ওঁরা একটি চৌমাথায়
এসে ওঠেন।
জড়ানো গলায় অরুণেশ বলেন, ‘এই
রাস্তাডা কামেশ্বরী রোড। দেবী কামেশ্বরী এই পথেই বিরাজ ও বসত করেন। আপনে অত দূরে
দূরে হাঁটেন ক্যান? মাতালের সঙ্গ কি ভীতিপ্রদ না-কি?’
—‘না না, এই তো হাঁটছি’
—‘এইডা আমার চ্যালা। অর নাম সঞ্জিৎ। এই চৌমাথা ধইরা সুজা
গেলে কুমারটুলি। দেবীমূর্তি নির্মাণ হয়। আর অহন আমরা যেইহানে যাইতাসি, সেইহানে
গেলে হয় দেবীদর্শন’।
ভবানী বিড়ি চৌপথী পেরিয়ে
সোজা হাঁটতে হাটতে ওরা চলে আসেন দুর্গাবাড়ি। ডান দিকে ভাটিখানা। বাঁয়ে যৌনপল্লী।
সন্ধে পুরোপুরি হয়ে গেছে। জ্বলে উঠেছে দোকান রাস্তার আলো। জমে উঠছে বাজার দোকান
পসরা। যৌনপল্লীতে এটাই পসরা জমার শুরুয়াদ। চলবে রাতভর। মাতাল দালাল বেশ্যা মদ সব
মিশে এক অতিপ্রাকৃত জগৎ এখানে। শহরের মধ্যেই। কিন্তু শহর থেকে ভিন্ন। যৌনপল্লীতে
ঢুকে পড়েন ওরা তিনজন। বঙ্কিম এখনও বুঝতে পারেন না সঞ্জিতকে কেন নিয়ে এলেন অরুণেশ।
রঙে রঙে সেজে বাড়ির সামনে চেয়ার মোড়া পেতে বসেছে মেয়েরা। অনেক পুরুষ ঘুরছে এলোমেলো
গন্ধ শুঁকে শুঁকে। কেউ মাতাল। কেউ খদ্দের। কেউ দালাল। মদ এখানে আতরের মতো ছড়িয়ে
পড়েছে। ঘেঁষাঘেঁষি ক’রে একের পর এক বাড়ি। ঘরের পর ঘর। স্তন বৃন্ত নাভি জাং যোনি
লিঙ্গ ও মদ মিশে আদিম ক’রে তুলেছে এই পাড়াকে। কোনও এক ঘর থেকে মেয়েলি খিলখিল হাসি।
হাসির ফোয়ারা। তুবড়ি। স্থূলকায়া কোনও মাসির গলায় অনাবিল খিস্তি। কারোর চিকণ গলায়
গান ভাসে।
বন্ধু ধন, ধন রে, এতোই গোঁসা কি তোমার শরীলে
মুইতো পীরিত করং না
টাড়ির চ্যাংড়া ছাড়ে না
আরও দিয়া যায় পীরিতের বায়না
বন্ধু ধন, ধন রে, এতোই গোঁসা কি তোমার শরীলে
দেখিতে দেখিতে গাবুর হনু
শনিবারে দিন নাইয়র গেনু
টাড়ির চ্যাংড়া করে হায় রে হায়…
গানটা কানে নিতে নিতে পিছিয়ে
পড়েন বঙ্কিম। সঞ্জিৎ হাতের ইশারায় ডাকে। এগোতে হয় বঙ্কিমকে। কোনওদিন এ’ গান
শোনেননি আগে। আর হয়ত কোনওদিন শোনাও হবে না। গলায় কি করুণ বিষাদ নিয়ে এই সন্ধ্যাপথে
প্রবেশ করেছিল এ’ গান।
দাম-দর ক’রে একজনের ঘরে ঢুকে
পড়েছে অরুণেশ আর সঞ্জিৎ। অনেক দ্বিধা সঙ্কোচ নিয়ে বঙ্কিমও ঢোকেন। ঢুকতে হয়। উঁচু
খাট। ড্রেসিং টেবিল। বড়ো আয়না। টিভি। ছোট দুটো সোফা। দেয়ালে ক্যালেণ্ডার। মা কালী।
লোকনাথ বাবা। ঠাকুরের সিংহাসন। ছোট প্লেটে নকুলদানা। বাতাসা। প্রসাদ। ছাপা শাড়ি কেটে বানানো পর্দা দিয়ে ঢাকা পাশের ঘরটা রান্নাঘর, অনুমান হয়। শ্যামলা গড়ন একটি মেয়ে।
যথেষ্ট ভারী বুক। চুড়িদার। ওড়না নেই। গলায় নেকলেসের মতো গোল হয়ে আছে ঘন কালো দাগ।
হুড়মুড়িয়ে তিনজনকে ঘরে ঢুকতে দেখে মেয়েটি বলে,—
—‘তিনজনে কি একসাথে লাগাবে
না-কি গো? যাও, দু’জন বাইরে যাও। একজনের হ’লে আরেকজন এসো।’
এ’সব পরিবেশে অরুণেশ
অপ্রতিরোধ্য। চূড়ান্ত অপ্রত্যাশিত ভাষায় মেয়েটিকে বলেন,
—‘মা জননী, তর নাম কী?’
—‘এই ন্যাকাচোদাটা কে গো?’
—‘দ্যাহো মা, আমি কিছু করুম
না তমার লগে। এই ছাওয়ালডার নাম সঞ্জিৎ। আমার চ্যালা। তুমি অর লগেই যা
করার করবা। কিন্তু দুইহান শর্ত আছিল।’
—‘ওমা! শর্ত আবার কিসের গো?
লাগাতে এসেছ লাগিয়ে চলে যাবে। আমি পয়সা নেব। ফালতু বাজে ব’কো না তো—’
—‘চুপ কইরা বসো আগে। বসো।’
এ’ নতুন ধরনের খদ্দের।
মেয়েটি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে খাটে পা ঝুলিয়ে বসে।
—‘নাম কী তর?’
—‘নমিতা, দাস।’
—‘শুনো, তুমি এই সঞ্জিতের
লগেই করবা। ও-ই তুমার কাস্টোমার। কিন্তু, তুমি চিৎ হয়্যা শুইয়া থাকবা আর অ খালি
কইরা যাব, তা যেন না হয়। তুমার মুখ দিয়া য্যান্ শীৎকার বাইর হয়’।
তারপর কি ভেবে বলেন, ‘শীৎকার
বুঝ?’
নমিতা চোখ বড়ো বড়ো ক’রে মাথা
নাড়ে। শীৎকারের মানে সে জানে না।
—‘এই যে বঙ্কিমচন্দর, অরে
বুঝান শীৎকার মানে কী’
অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন বঙ্কিম।
কী বলবেন। সত্যিই তো, শীৎকারের মানে কী?
শেষে অরুণেশই বলেন, ‘মানে, তর মুখ
দিয়া য্যান্ আ উ শব্দ হয়। চুপ কইরা থাহিস না।’
ফিক ক’রে
হেসে ফ্যালে নমিতা, ‘ও। এই কথা।
সেটা বললেই তো হয়।’
—‘হ। আইরেকখান শর্ত আছে।’
মেয়েটা চোখ ড্যাব-ড্যাব ক’রে তাকিয়ে আছে অরুণেশের দিকে।
—‘আমরা দুইজন এই ঘরে বইয়া বইয়া দেহুম তদের সব কাজ।’
—‘অ্যাঁ?’
—‘হ। তর মাসিরে স-ব কওয়া আছে। ’
গুটিয়ে থাকা
কেন্নো হঠাৎ যেভাবে সোজা হয়ে যায়, ছিটকে দাঁড়ায় নমিতা। এর যতটা কপট রাগে তার অধিক
যৌন-রসিকতায়।
—‘ঢ্যামনাচোদা বুড়ার শালা
শখ। নিজে লাগাতে পারিস না অন্যের চোদা দেখবি ক্যান্ রে বুড়া? তোর ডাণ্ডায় জোর
নাই?’ ব’লে নমিতা অরুণেশের পুরুষাঙ্গে হাত ড’লে দেয়। অরুণেশ ছিটকে
স’রে যান।
—‘অমন করে না মা জননী। যা
কইলাম, অহন মন দিয়া করো।’ প্রেক্ষাগৃহে পর্দা ওঠার প্রাক্-মুহূর্তে নাটকের
পরিচালকের মতো অরুণেশ।
নমিতা সঞ্জিতের দিকে ফিরে
কোমরে হাত দিয়ে বলে, ‘নাও। শুরু করো এবারে।’
সঞ্জিৎ এতোক্ষণ যেন এরই
অপেক্ষায় ছিল। নমিতার গলায় ঘাড়ে মুখ ঘষতে ঘষতে ওর বুকের ওপর দু’হাত ছেড়ে দেয়।
বঙ্কিম আর অরুণেশ, ব’সে পড়েন দুটো সোফায়। ওরা দু’জন বিছানায় শুয়ে পড়ে। নমিতা খুলে
ফেলেছে তার কামিজ। নীচে ব্রেসিয়ার নেই। সঞ্জিৎ তৎক্ষণাৎ ওর ডান বৃন্তে
কামড় দেয়। নমিতা আহ্ ক’রে ওঠে। সঞ্জিতের দাঁত, জিভ নমিতার বাম ও ডান বৃন্তে ঘুরতে
থাকে। হাতে পিষতে থাকে অপর স্তন। ওর কোমর, পেট, বুক জোয়ারকালীন সমুদ্রের মতো ফুলে
ফুলে ওঠে। কি অসাধারণ সাড়া দিচ্ছে মেয়েটি। বঙ্কিম ভাবে। অরুণেশের দিকে তাকান। তিনি
ধ্যানস্থ। চোখ বন্ধ। সমস্ত ইন্দ্রিয়কে যেন কানে এনে জড়ো করেছেন তিনি। সঞ্জিতের
জায়গায় নিজেকে কল্পনা করেন বঙ্কিম। ব্যর্থ হন। ওদের রতিক্রীড়া মনঃসংযোগ কেড়ে
নিচ্ছে। অরুণেশ কি ক’রে চোখ বুঁজে আছেন। ভেবে আশ্চর্য হন বঙ্কিম। বিভোর হয়ে দেখতে
থাকেন ওদের যৌনাচার। শার্ট খুলে ফেলেছে সঞ্জিৎ। নমিতা ওর পুরুষাঙ্গে হাত বোলাতে
বোলাতে খুলতে থাকে বেল্ট। একইসময়ে সঞ্জিৎ তখন ব্যস্ত নমিতার সালোয়ারের ফিতে খুলতে।
সঞ্জিতের প্যান্ট ও জাঙিয়া টেনে খুলতেই বেরিয়ে পড়ে উত্থিত দণ্ড। নমিতা পরম যত্নে
হাত দেয় তাতে। জিভের ডগা বুলিয়ে দেয় লিঙ্গমুখে। সঞ্জিৎ আর দেরি করে না। কাঁধে
ধাক্কা দিয়ে শুইয়ে দেয় নমিতাকে। নমিতাও আমন্ত্রণ বোঝাতে ফাঁক করে নিজের দু’ পা। ওর
যোনিতে সটান প্রবেশ করে সঞ্জিতের লিঙ্গ।
অরুণেশ তখন চোখ বন্ধ ক’রে এক-একটা শব্দ কুঁদে
নির্মাণ করতে থাকেন তাঁর কবিতা।
অস্পৃশ্য নদীর জলে একদিন গোধূলিবেলায়
নত হয়ে ধুয়ে নেব খড়্গ
আমার
তুমি সেইদিন
ঝোপের আড়াল
থেকে হেঁটে এসে একা
বিকেলের নদীর
আলোয় মুখোমুখি একান্তে দাঁড়াবে?
অথবা পোশাক
ছেড়ে ধীরপায়ে নেমে যাবে জলে
আমি
খড়্গ তুলে নেব, আমি দুঃখ তুলে নেব বুকে
তুমি নগ্ন
তোমার পোশাক
আমি দু-হাতে ভাসিয়ে দিয়ে যাব
তুমি একা খেলা
করো জলে।
ওদের মিলন তারসপ্তকে উঠছে।
নমিতার ক্রমাগত জোরালো শীৎকারে এই ঘরের দেয়াল ফেটে যাবে মনে হয়। আর কোনও শব্দ নেই
ঘরে। শুধু রমণরত দুই মানব-মানবীর আশ্লেষ ধ্বনি। কাঁকড়ার দাঁড়ের মতো নিজের দু’ পা
সঞ্জিতের কোমরের ওপর তুলে দিয়েছে নমিতা। দু’ পায়ের গোড়ালি দিয়ে চাপ দিচ্ছে
সঞ্জিতের কোমরে। যাতে তার লিঙ্গ আরও সজোরে ও গভীরে প্রবেশ করতে পারে। বীর্যপাত
সম্পন্ন হ’লে সঞ্জিৎ উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে নমিতার ওপর। মড়ার মতো ওদের নিশ্চল শুয়ে
থাকা দেখে অরুণেশ তর্পনের মন্ত্রপাঠের মতো বলছেন,
সম্পূর্ণ নগ্ন
হয়ে নেমেছ কি শতাব্দীর শূন্য রাত্রিবেলা?
গোপনে গচ্ছিত
থাক, মৃত্যু এসে মুছে দিক বিগত জন্মের কুয়াশা,
সেই ভিন্ন এক
অনুভূতি, নদী কি চুম্বন করেছে অণ্ডে? নয়, কেউ নয়, একা?
হঠাৎ হয়েছে
মনে, পুরুষটি মরে পড়ে আছে, পাশে স্ত্রীলোকের চুল বাঁধা।
কিছুক্ষণ পর সঞ্জিৎ আর নমিতা
উঠে বসে। দু’জনে জামাকাপড় প’রে নেয়। কিন্তু চলে যাওয়ার কথা কারোরই মনে
আসে না। নমিতাও বলে না চলে যেতে। চারজন মানুষ চুপ ক’রে ব’সে থাকে কিছুক্ষণ। একজন্ম
কালের মতো সুদীর্ঘ মনে হয় সেই কিছুক্ষণ। হয়ত তখনও কান পাতলে দেয়ালে দেয়ালে শোনা
যাবে নমিতার শীৎকার। আর যজ্ঞের ঋত্বিকের মতো অরুণেশের মন্ত্রপাঠ। অরুণেশই ঘোর
ভাঙেন।
—‘বঙ্কিমচন্দ্র, কবিতা
ল্যাখনডা হইতেআসে আমার কাছে পার্সোনাল স্যালভেশান। আত্মত্রাণ। এইডা আমার কাছে ফ্যাশানের
জিনিস না। আমি মনে করি আমাগো দ্যাশে কবিতা ল্যাখনডা অন্য অনেক কিছুর থিক্যা বেশি
চ্যালেঞ্জিং। এইহেনে একডা শ্রীকৃষ্ণকীর্তন ল্যাখা হইসে। এ ধন যৌবন বড়ায়ি
সবঈ তো অসার—ছিণ্ডিআঁ পেলাইবোঁ গজমুকুতার হার, এইরকম শক্তিশালী লাইন ল্যাখা হয়্যা
গ্যাসে। রাম হমারা হমে জপেরে—হম পায়ো বিশ্রাম কবীরা, রামের লগে
বিশ্রামের যে ধ্বনি-অভিঘাত সাতশো বছর আগে কবীর তা দ্যাখায়্যা গ্যাসে। এই দ্যাশে
কবিতা ল্যাখনডা ছ্যালেমানুষির কাম না। পদে পদে সতর্ক হয়্যা নির্মাণ করা লাগে।
শিল্পে স্রোতগুণ থাকা দরকার। প্রকৃতি আর এই নীচুতলার জীবন, পিঠাপিঠি চলে। এ্যাকে অইন্যের
রূপক। একডু আগে দ্যাখলেন স্ত্রী যোনি আর পুরুষের লিঙ্গ। অহন নদীর দিকে তাকান।
দ্যাহেন নৌকা চলে। মাঝি লগি টানে। দেইখা মনে হয় না স্ত্রী যোনির ভিতর পুরুষের
লিঙ্গ? মনে হয় না শিবলিঙ্গ
ভাইসা যায় নদীতে নদীতে—’
নমিতা বলে, ‘দারু খাবেন
দাদু?’
—‘আছে না-কি? ঢাল ঢাল। দুই
পেগ মাইরা উঠি’
নমিতা মদ এনে অরুণেশের হাতে
দেয়।
জলের মতো
সরল ও আভিজাত্যহীনভাবে অরুণেশ তা খেয়ে নেন।
(চলবে)
একটা অত্যাবশ্যকীয় জার্নি যেন। পারা আর না পারার মিশেল কিভাবে সংঘবদ্ধ হচ্ছে লেখাটায়। একটা অ-গন্তব্যের ট্রেনের এক পাশ ফেরা জানলা। আর বাইরে দিয়ে এক এক করে পেরিয়ে যাচ্ছে জীবনপুরের ত্যাগ তিতীক্ষা মোহ কাম ক্রোধ মোক্ষ
ReplyDelete